Wednesday, May 06, 2020

উপরে বিদ্যানন্দ, ভিতরে ইস্কনানন্দ- ২য় পর্ব

‘বিদ্যানন্দ’ ও এর ‘এক টাকায় আহার’ যে মিশনারিদের মতই ইসকনের একটি বি-টিম এটা নিয়ে গতকাল একটি পোস্ট করায় সাধারণ জনগণের গণসমালোচনার মুখে পড়ে কিশোর কুমার দাস নামক চরম সাম্প্রদায়িক ও ইসলাম অবমাননাকারী উগ্রহিন্দুত্ববাদী লোকটি বিদ্যানন্দের প্রধান পদ থেকে পদত্যাগ করে। এতে হতাশ হয় ইসকন। বাংলাদেশের ইসকন ডেমোক্রেট ব্লকের হওয়ায় কিশোর কুমারের পদত্যাগের খবরটি প্রায় সব কয়টি মিডিয়া প্রচার করে, অথচ কিশোর কুমার দেশের এক ভাগ মানুষের কাছেও পরিচিত না। 
ইসকন একটি হিংস্র এবং ‘অখণ্ড ভারত তত্ত্ব’ নিয়ে বাংলাদেশে কাজ চালিয়ে যাওয়া একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের মিডিয়া ইসকনের বিরুদ্ধে কথা বলে না। কারণ উপরে গিয়ে ইসকনের বড় একটি অংশ ডেমোক্রেট ব্লকের সাথে মিশেছে তাই। আর পৃথিবীর বেশিরভাগ মিডিয়াই ডেমোক্রেটদের পক্ষের। (এটা নিয়ে অন্য একসময় বিস্তারিত আলোচনা করবো।)

যাই হোক, এখন আমি ‘বিদ্যানন্দ’ ও এর ‘এক টাকায় আহার’ যে ইসকনের বি-টিম সেটার কিছু প্রমাণ দিচ্ছি।
প্রথমেই বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাস সম্পর্কে একটু জেনে নিন। কিশোর কুমার দাস হচ্ছে মার্কেটিংয়ের ওপর এক্সপার্ট একজন লোক। তাই ধান্দা ও বাটপারী কী ও কত প্রকার সে তা ভাল করেই এ্যাপ্লাই করতে জানে। এই ধান্দা করতে গিয়ে সে তার বোন বিদ্যানন্দের সহ-প্রতিষ্ঠাতা শিপ্রা দাসকে পর্যন্ত অস্বীকার করে বসেছে। 

২০১৫ সালের এপিলে প্রথম আলো পত্রিকায় ‘ভাইবোনের বিদ্যানন্দ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়- “ভাই কিশোর কুমার দাশ সুদূর পেরুপ্রবাসী। আর বোন শিপ্রা দাশ আছেন ঢাকায়। ভাইবোন মিলে কীভাবে দাঁড় করালেন বিদ্যানন্দ নামের ব্যতিক্রমী এক সংগঠন?” (সূত্র-১)

 অর্থাৎ এখানে প্রথম আলোর কাছে কিশোর কুমার বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দুজনের পরিচয় দেয়। এর মধ্যে সে নিজে এবং তার বোন শিপ্রা দাস। 

কিন্তু এদিকে ২০২০ সালে এসে অর্থাৎ গত ২রা এপ্রিল ধান্দাবাজ কিশোর কুমার দেশ রুপান্তর পত্রিকার কাছে শিপ্রা দাস যে তার বোন সেটা অস্বীকার করে বসে। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের শুরুর গল্প বলতে গিয়ে কিশোর কুমার দেশ রূপান্তর পত্রিকায় বলেছে- ‘‘২০১৩ সালের শেষের দিকে আমি বিদ্যানন্দকে একদম ছোট পরিসরে গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। আমি পেরুতে থাকায় কীভাবে করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আর দেশে এ কাজ করবে এমন কাউকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। পরে শিপ্রা দাশ নামে একজনের সঙ্গে পরিচয় হয়। তাকেই পুরো দায়িত্বটা দিলাম।” (সূত্র-২) 

পাঠক- যে ব্যক্তি তার আপন বোনকে এক জায়গায় বোন আরেক জায়গায় অপরিচিত বলে পরিচয় দেয় তার স্বভাব-চরিত্র কেমন হতে পারে সেটা খুব সহজেই বুঝার কথা। এ ধরণের লোক খুব ডেঞ্জারাস প্রকৃতির হয়ে থাকে। বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার সেরকমই একজন।

শুধু তাই না, কিশোর কুমারের উগ্রতা এবং তার ধান্দাবাজীতে অতিষ্ঠ হয়ে ২০১১ সাথে তার স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। 
শিপ্রা দাসের বিষয়টি এজন্যই আনলাম কারণ, শিপ্রা দাসের সংযোগ ইসকন মন্দিরের সাথে। সে সেখানে প্রায়ই ইসকন সিম্বল গেড়ুয়া পোষাক পড়ে ঢোল-তবলা নিয়ে নাচানাচি করে- (সূত্র-৩) 

শিপ্রা দাস উগ্রহিন্দুত্ববাদী ও অখণ্ড ভারত তত্ত্বে বিশ্বাসী সংগঠন ইসকন মন্দিরে পুজা দিতে গেলেও সে মুসলিমদের পবিত্র মসজিদ নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক ও অবমাননাকর কথাবার্তা বলে থাকে এমনকি ফেসবুকে পোস্টও করেছে- “মসজিদের দুয়ারে দুয়ারে করোনা কখনও ভীড় করেনা” বলে । (সূত্র: গত ১০ এপ্রিলের তার ফেসবুক স্টাটাস।) ফেসবুকে সে যেটুকু বলেছে, অন্তরে যে আরো কঠিন বিদ্বেষ এতে সন্দেহ নেই।

অর্থাৎ বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাস ধান্দাবাজ ও কপটক এবং অন্যজন তার বোন শিপ্রাদাস ইসকন মন্দিরের সেবক। মোসাদ তৈরি উগ্রহিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন কর্তৃক বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকাণ্ড ইতিমধ্যে বাংলাদেশের জনগণ অবগত হওয়ায় কিশোর কুমার দাস তার বোন শিপ্রা দাসকে বোন হিসেবে অস্বীকার করেছে মিডিয়ার কাছে। আর ইসকনের সাথে তার লিংকাপের বিষয়টি ফাঁস হওয়াটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

এবার চলুন- কিশোর কুমারের ‘বিদ্যানন্দ শিক্ষার্থী সংসদ’ যে নিয়মিত ইসকনের অনুষ্ঠানে যোগ দেয় সেটারও একটা প্রমাণ দিচ্ছি- দেখুন: (সূত্র-৪)

এখন কথা হল বিদ্যানন্দ তো খারাপ কিছু করছে না। অসহায়দের খাওয়াচ্ছে, খারাপ কি? হ্যাঁ, এখানেই যত সমস্যা। 
কিছুদিন পূর্বে কক্সবাজারে রোহিঙ্গারা হঠাৎ খুব উগ্র হয়ে ওঠে। রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ছয় হাজার ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করে  প্রশাসন।  তখন সারা দেশব্যাপী রোহিঙ্গা বিরোধী একটা সেন্টিমেন্ট তৈরি হয়। অনেক রোহিঙ্গাকে তখন কঠিন অমানবিকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। 
রোহিঙ্গাদের হাতে অস্ত্র দেয়া এবং তাদের উস্কে দেয়ার পেছনে ‘মুক্তি’ নামক একটা এনজিও কাজ করেছে। এই এনজিওটি কাদের জানেন?? এটা চট্টোগ্রামের রামকৃঞ্ষ মিশনের দ্বারা পরিচালিত একটি এনজিও।  রামকৃষ্ঞ মিশনের দ্বারা পরিচালিত এই মুক্তি এনজিওটি প্রথমে রোহিঙ্গাদের প্রচুর ত্রান দিয়েছিল। এমনকি তারা গরুর গোস্ত সংগ্রহ করার জন্য দরপত্র পর্যন্ত আহবান করেছিল। (সূত্র-৫) 

রামকৃষ্ঞ সেবাশ্রমের সভাপতি-সেক্রেটারি দ্বারা পরিচালিত মুক্তি কক্সবাজার নামক এনজিওর কেন গরুর গোস্তের প্রতি এতো টান চলে আসলো? ভারতে যেখানে রামকৃষ্ঞ মিশন থেকে উঠে আসা নরেন্দ্র মোদী গরুর গোস্ত রাখার অপরাধে মুসলিমদের মেরে এককার করে ফেলছে, বাংলাদেশ সেই একই রামকৃষ্ঞ মিশন কুরবানীর গরুর গোস্তের জন্য দরপত্র আহ্বান করে, কারণটা কী? 

কারণ- তাদের কাজ হচ্ছে মানুষের অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করা। তারা বাংলাদেশে অসহায় রোহিঙ্গাদের বিশ্বস্ততা অর্জন করবার জন্য হিন্দু হয়েও গরুর গোস্ত খাওয়ায়। সবশেষে রোহিঙ্গাদের বিশ্বস্ত হয়ে উঠলে বাংলাদেশের প্রতি রোহিঙ্গাদের ক্ষেপিয়ে তোলে এবং রোহিঙ্গাদের নিকট অস্ত্র সরবরাহ করে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতি বাংলাদেশের জনগণ যেন বিরূপ ধারণা পোষণ করে এবং বাংলাদেশে থেকে তাদের বের করে দেওয়ার হুজুগ উঠে সেই পরিবেশ তৈরি করে দেয়া। এবং সহযোগিতা, গরুর গোস্ত খাওয়ানো এবং ত্রানের নামে সেটা তারা করতে সক্ষম হয়েছিল। পরবর্তিতে গোয়েন্দা সংস্থা রোহিঙ্গাদের উগ্র হওয়া ও তাদের অস্ত্র সরবরাহের নেপথ্যে রামকৃষ্ঞ মিশনারী পরিচালিত এনজিও মু্ক্তি’র সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় মুক্তির কার্যক্রম প্রশাসন বন্ধ করে দেয়। (সূত্র-৬) 

ঠিক একইভাবে ইসকনের বি-টিম বিদ্যানন্দ আজকে যে বাংলাদেশের মুসলিমদের জনগণের টাকা নিয়ে ত্রানধান্দার নামে প্রসাদ খাওয়াতে নেমেছে এর পেছনেও ঠিক রামকৃষ্ঞ মিশনারী পরিচালিত এনজিও মুক্তি কক্সবাজারের মতই তাদের এজেন্ডা রয়েছে। তারা একদিকে যেমন ত্রানের নামে পৌত্তলিক মন্ত্রযুক্ত প্রসাদ খাইয়ে মুসলিমদের কৃষ্ঞভক্ত বানাচ্ছে, তেমনি বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকেও কব্জা করবার প্রজেক্টে নেমেছে। ভারত যেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রন আজও নিতে পারে নি, সেখানে ভারতের পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় ইসকনের বি-টিম এনজিও ‘বিদ্যানন্দ’ অলরেডি সেনাবাহিনীর খুব কাছাকাছি চলে গেছে।

পাদটীকা-
সূত্র:১-  http://archive.is/UNndF
সূত্র:২-https://bit.ly/35yZqk3
সূত্র:৩- https://bit.ly/2zUnMZQ
সূত্র:৪ https://bit.ly/2L40tPC 
সূত্র:৫-  http://archive.is/X9Ric
সূত্র:৬- https://bit.ly/2YDMNmu

 Srabon Ispahani-শ্রাবন ইস্পাহানী  সঙ্গেই থাকুন (চলবে)

No comments: