Monday, July 16, 2018

ব্যভিচার

তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। অবশ্যই এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ। [সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩২ (দ্বিতীয় পর্ব)]


তাফসির : আলোচ্য আয়াতে ব্যভিচারের কাছে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। অর্থাৎ যেসব উপকরণ ব্যভিচারে উদ্বুদ্ধ করে, সেসব উপকরণ থেকে দূরে থাকতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই একজন নারী ও একজন পুরুষের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক তৈরি হয় দেখাদেখি থেকে। তাই ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়ের প্রতি দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে পরে তা গুনাহে প্ররোচিত করতে না পারে। ইসলামের এই নির্দেশনা মানুষের মানসিক সুস্থতা ও পরিশুদ্ধ সমাজ কাঠামো গঠনের জন্য দেওয়া হয়েছে। এর অন্যতম লক্ষ্য নারী নির্যাতনের পথ রুদ্ধ করা। নারীরা যেন নিশ্চিন্তে, নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে সমাজে জীবন যাপন করতে পারে, ইসলাম সেদিকেই খেয়াল রেখেছে। তাই ব্যভিচারকে অশ্লীল ও নিকৃষ্ট কাজ ঘোষণার পাশাপাশি এর জন্য পার্থিব ও অপার্থিব শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীকে আমৃত্যু পাথর নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ইসলামী শরিয়তে ব্যভিচারী বিবাহিত হলে তার শাস্তি রজম বা পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড। আর অবিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীকে এক শ বেত্রাঘাত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারীতাদের প্রত্যেককে এক শ কশাঘাত করবে...। (সুরা : নুর, আয়াত : ২)


তবে এ শাস্তি প্রয়োগ করবে ইসলামী রাষ্ট্রের সরকার ও প্রশাসন। অন্যদিকে কোনো কারণে এ শাস্তি আরোপিত না হলে দুনিয়ায়ই কোনো না কোনোভাবে এর শাস্তি এসে যেতে পারে। হাদিস শরিফে এসেছে, ব্যভিচারের মন্দ পরিণাম ছয়টি। তিনটি দুনিয়ায় আর তিনটি আখিরাতে। দুনিয়ার তিনটি হলো১. চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট হওয়া, ২. দরিদ্রতা, ৩. অকালমৃত্যু । আর আখিরাতের তিনটি হলো১. আল্লাহর অসন্তুষ্টি, ২. হিসাব-নিকাশের কঠোরতা ও ৩. জাহান্নামের কঠিন শাস্তি। (ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধ, ই.ফা. পৃ. ১০৯)


ব্যভিচারে অভ্যস্ত ব্যক্তি ধীরে ধীরে ঈমান ও আমল থেকে বঞ্চিত হতে থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোনো মানুষ যখন ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন তার ভেতর থেকে ঈমান বেরিয়ে যায় এবং এটি তার মাথার ওপর মেঘখণ্ডের মতো ভাসতে থাকে। অতঃপর সে যখন তাওবা করে, তখন ঈমান আবার তার কাছে ফিরে আসে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৯০)


তিনি আরো ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ব্যভিচার করে বা শরাব পান করে, আল্লাহ তার ওপর থেকে ঈমান ছিনিয়ে নিয়ে যান, যেভাবে মানুষ মাথার দিক দিয়ে জামা খুলে নেয়। (মুস্তাদরাকে হাকিম : ১/২২)


দুনিয়ায় বিভিন্ন কারণে মানুষ পাপ করে পার পেয়ে যায়। পরকালে অবশ্যই এর শাস্তি ভোগ করতে হবে; এমনকি দুনিয়ায়ও যেকোনো সময় পাপী ব্যক্তি আল্লাহর আজাবে পতিত হতে পারে। ইরশাদ হয়েছে, যারা পাপাচারের ষড়যন্ত্র করে, তারা কি এ বিষয়ে নির্ভয় হয়ে গেছে যে আল্লাহ তাদের ভূগর্ভে বিলীন করবেন না অথবা এমন দিক থেকে আজাব আসবে না, যা তাদের ধারণাতীত? অথবা চলাফেরারত অবস্থায় তিনি তাদের পাকড়াও করবেন না? তারা তো তা ব্যর্থ করতে পারবে না। (সুরা : নাহল, আয়াত : ৪৫-৪৬)