Thursday, April 11, 2013

ঝুকি নিয়ন্ত্রন

ঝুকি নিয়ন্ত্রনকে এভাবে বলা যায় এটা এমন একটা ব্যাবস্থা যার মাধ্যমে, জনগন, সম্পত্তি, আয় ও পরিবেশের ঝুকি নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের রক্ষা ও উন্নয়ন সাধান সম্ভব। প্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিকতা রক্ষা ও উন্নতি করার লক্ষে এখন অনেক প্রতিষ্ঠান ঝুকি ব্যাবস্থাপনাকে তাদের অন্যতম ব্যাবস্থা হিসাবে গ্রহন করছেন। ঝুকি নিয়ন্ত্রনের মূল লক্ষ্য থাকে ক্ষতির নিয়ন্ত্রন। আর ক্ষতির নিয়ন্ত্রন নির্ভর করে কতটা দূর্ঘটনা প্রতিরোধ করা গেল। ঝুকি নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে সবচেয়ে বড় পাওয়া হচ্ছে করপোরেট লক্ষ অর্জন। ঝুকি নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি সেই সব ক্ষতির জন্য সবচেয়ে কার্যকর যা ঐ প্রতিষ্ঠানের বা একই রকম অন্য প্রতিষ্ঠানে সংগঠিত দূর্ঘটনার মাধ্যমে হয়েছে। ঝুকি নিয়ন্ত্রনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যাবস্থা আছে এর মধ্য থেকে বেছে নিতে হবে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য কি ধরনের ব্যাবস্থা নিতে হবে। একই ধরনের প্রতিষ্ঠান হওয়ার পরও ভিন্ন ভিন্ন ব্যাবস্থা গ্রহন করা হতে পারে। তাহলে দেখা যাচ্ছে একই ধরনের প্রতিষ্ঠানে ভিন্ন ধরনের দূর্ঘটনা হতে পারে কিন্তু প্রতিকারের ব্যাবস্থা গ্রহন করা উচিৎ দূর্ঘটনার সম্পর্কিতভাবে। ঝুকি নিয়ন্ত্রনের জন্য সাধারন নিয়মাবলীগুলো দেখা যাক। একই ধরনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলির লক্ষ পর্যালোচনা, প্রকৃত ও সম্পর্কিত দূর্ঘটনা, অন্যান্য ব্যাবস্থার সাথে সম্পর্কিত করা, যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহন, নমনিয়তা, বিভিন্ন ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা গ্রহন। এছাড়া আর চার ধরনের ঝুকি নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থা আছে, ১)ঝুকি বর্জন করা - কোন ভাবেই কোন বুঝি না নেওয়া, ২)ঝুকি অপসারন -বর্তমান ঝুকি প্রতিরোধ করা, ৩)ঝুকি কমান - মূল ঝুকির প্রতিরোধ ব্যাবস্থা গ্রহনের মাধ্যমে ঝুকি কমান এবং ৪)ঝুকি পরিবর্তন-অর্থাৎ উক্ত ঝুকিকে এমন কারো কাছে দেওয়া যার জন্য এই প্রতিষ্ঠানের মারাত্মক ঝুকি তার প্রতিষ্ঠানের কাছে সাধারন ঝুকি। এ সকলের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করে ঝুকি নিয়ন্ত্রন করা যায়। এখন দেখা যাক কিছু বাস্তবিক ঝুকির নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থা ঝুকি বর্জন - বন্যা প্লাবিত এলাকায় কলকারখানা না করা। খরা অঞ্চলে ওয়াশিং প্লান্ট করা উচিৎ হবে না। ঝুকি অপসারন - এমন যন্ত্রাদী পরিহার বা অপসারন করা উচিৎ যার খুচরা যন্ত্রাংশ সহজলভ্য নয় বা ব্যায়বহুল অথবা রক্ষনাবেক্ষন খরচ খুব বেশী। ঝুকি কমান -পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যাবস্থা যেমন উচু দেয়ালের মাধ্যমে অনাকাঙ্খিত প্রবেশ ও চুরি রোধ করা সম্ভব। অন্যভাবে সঠিক প্রেসারগেজের মাধ্যমে গ্যাস বোতলের ধারন ক্ষমতা অনুযায়ী গ্যাস সংরক্ষন করা খনিতে ডেভি বাতির ব্যাবহারে বিপদ জনক গ্যাসের উপস্থিতি সনাক্ত করা ইত্যাদি। ঝুকি পরিবর্তন - উৎপাদিত পন্যের কিছু অংশের প্রক্রিয়া অন্য কাউকে দিয়ে করান যেমন নীট পোশাকের মূল কাপড় উৎপাদন করে রং করার প্রক্রিয়া অন্যের মাধ্যমে করিয়ে যার জন্য কম ঝুকির কাজ, আবার সেলাই নিজে করা সম্ভব। একটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন রকম কর্মকান্ড হয় যার প্রতিটি কোন না কোন দপ্তর নিয়ন্ত্রন করে এবং ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ঝুকির সম্মুখিন হয়। এই ধরনের কিছু উদাহরন দেওয়া গেল ঃ- সরবরাহকারীর মাধ্যমে ঝুকি - সরবরাহ না হওয়া, সঠিক পন্য সরবরাহ না হওয়া, দেরীতে সরবরাহ হওয়া। সেবাদান কারীর মাধ্যমে ঝুকি - সেবাদানে ব্যার্থ হওয়া, নিকৃষ্ট মানের সেবা দেওয়া। তথ্য সংরক্ষন ব্যাবহার মাধ্যমে ঝুকি - সঠিক তথ্য সন্নিবেশীত না হওয়া। পর্যাপ্ত তথ্য সংরক্ষন না হওয়া, ভূল তথ্য সংরক্ষিত হওয়া।শিল্প ও যন্ত্রাংশের মাধ্যমে ঝুকি - যন্ত্রাদী অচল হওয়া, চুরি হওয়া। ভান্ডার ব্যাবস্থার মাধ্যমে ঝুকি - চুরি হওয়া, এলোমেলো হওয়া, ধ্বংস হওয়া, দূষিত হওয়া। যোগাযোগ ব্যাবস্থার মাধ্যমে ঝুকি - দূর্ঘটনার শিকার হওয়া, চুরি যাওয়া, ছিনতাই হয়ে যাওয়া। খরিদ্দার এর মাধ্যমে ঝুকি-খরিদ্দার হারান। শ্রমিকের মাধ্যমে ঝুকি - দাঙ্গা, ধর্মঘট, কাজে যোগদান না করা, কাজে গাফিলতি করা, আহত হওয়া, অসুস্থ হওয়া ইত্যাদি।

ঝুকি নিয়ন্ত্রনে খরচ কিভাবে হয় আর কোন কোন খাতে খরচ হয়। এই খরচ ঘিরে বিস্তর ভূল বুঝাবুঝি হয় কারন ঝুকি নিয়ন্ত্রনের খরচ হিসাব কিভাবে হবে। অবশ্যই ঝুকি নিয়ন্ত্রন হীনতার জন্য হওয়া খরচ এর সাথে হিসাব করা যাবে না । ঝুকি নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থা গ্রহন করার পরই হিসাব করতে হবে নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থায় কত খরচ হল এবং নিয়ন্ত্রন হওয়ার পরবর্তী দূর্ঘটনার জন্য কত খরচ হল। ঝুকি নিয়ন্ত্রনের জন্য যে সকল খরচ হয়। যেমনঃ বীমার কিস্তির খরচ, অবীমা কৃত অংশের ক্ষতিপূরন, ঝুকি নিয়ন্ত্রনের পরবর্তী দূর্ঘটনার খরচ, ঝুকি নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রশাসনিক খরচ। ঝুকি নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থা গ্রহন করা হল বা নাই হল পরের বিষয়গুলি বিবেচনায় আনলেই বোঝা যাবে ঝুকি নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থা গ্রহন করা উচিৎ নাকি অনুচিৎ। সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হওয়া বা ধ্বংস হওয়ার পরিমাপ যোগ্য ও অপরিমাপযোগ্য ক্ষতি। ফলস্বরূপ ক্ষয়ক্ষতি যেমন - ব্যাবসার কাজে ব্যাহত হওয়া, সরবরাহে ব্যাহত হওয়া, উৎপাদিত পন্যের উৎপাদন খরচ আদায় না হওয়া সঠিক ভাড়া আদায়ে ব্যার্থ হওয়া, ঋণ কৃত তহবিলের সুদ, বীমা খরচ বেড়ে যাওয়া, ভাড়াকৃত বা ধারকৃত শ্রমিক ও যন্ত্রাদীর খরচ, বাজার পতন, বিজ্ঞাপন খরচ বৃদ্ধি পাওয়া । দাবিকৃত দায় সম্পর্কিত খরচ, যেমন - পন্যের দায়, পেশাগত দায়, পরিবেশ ক্ষতির দায়, মালিক পক্ষের দায়, শিল্প সংক্রান্ত বিবিধ দায়, দায় বজায় রাখার জন্য ক্ষতি । এরপর আসে শারীরিক ভাবে দূর্ঘটনার জন্য খরচ - সংবিধিবদ্ধ বীমা খরচ, ব্যক্তিগত দূর্ঘটনার বীমা খরচ, সম্মিলিত জীবন বীমা খরচ, আবস্থান বজায় রাখার খরচ।

এখন চিন্তা করার সময়, আমরা ঝুকি নিয়ন্ত্রনের ব্যাবস্থা গ্রহন করব কি করব না। যদি গ্রহন না করি তাহলে কি হতে পারে সে সম্বন্ধে কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আর ঝুকি নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থা গ্রহন করলে সাধারন মানদন্ডে প্রয়োজন হবে - আইনগত প্রয়োজনীয়তা, যার মাধ্যমে দেশের এবং সার্বজনগৃহিত ব্যবস্থা গ্রহন, যথাযথ মানদন্ডের অনুাযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া, ঝুকি ব্যাবস্থাপনার বাস্তবায়ন, নিয়মিত বিশেষজ্ঞের মতামত গ্রহন এবং পূর্বাভিজ্ঞতা থেকে ব্যাবস্থা গ্রহন । ঝুকি নিয়ন্ত্রনের জন্য নিয়মিত যে ব্যাবস্থা নিতে হবে, আগুন প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, পেশাগত স্বাস্থ ও নিরাপত্তা, প্রাকৃতিক দূর্যোগের ঝুকি নিয়ন্ত্রন, যান্ত্রিক ঝুকি নিয়ন্ত্রন, পরিবহন ঝুকি নিয়ন্ত্রন, আপদকালীন ব্যাবস্থা গ্রহন, আইনগত ঝুকির ব্যাবস্থা গ্রহন , ব্যাবসায়ীক সংঘাতের ঝুকি নিয়ন্ত্রন, প্রকৌশল গত ঝুকি নিয়ন্ত্রন ও পরিবেশ প্রতিরক্ষা।

No comments: