Monday, January 30, 2017

রুবাই

[১]
রাতের আঁচল দির্ণ করে আসল শুভ ঐ প্রভাত,
জাগো সাকী ! সকাল বেলার খোঁয়ারি ভাঙো আমার সাথ
ভোলো ভোলো বিষাদ-স্মৃতি ! এমনি প্রভাত আসবে ঢের,
খুজতে মোদের এইখানে ফের, করবে করুন নয়নপাত ।

[2]
আধার অন্তরীক্ষে বুনে যখন রূপার পাড় প্রভাত,
পাখির বিলাপ-ধ্বনি কেন শুনি তখন অকস্মাৎ?
তারা যেন দেখতে বলে উজল প্রাতের আরশিতে-
ছন্নছাড়া তোর জীবনের কাটল কেমন একটি রাত !

[৩]
“ঘুমিয়ে কেন জীবন কটাস?” কইল ঋষি স্বপ্নে মোর,
“আনন্দ-গুল প্রস্ফুটিত করতে পারে ঘুম কি তোর ?
ঘুম মৃত্যুর যমজ-ভ্রাতা তার সাথে ভাব করিসনে,
ঘুম দিতে ঢের পাবি সময় কবরে তোর জনম-ভোর ।’’

[৪]
আমার আজের রাতের খোরাক তোর টুকটুক শীরীন ঠোঁট
গজল শোনাও, শিরাজী দাও,তন্বীসাকী জেগে ওঠ !
লাজ রাঙা তোর গালের মত দে গোলাপী-রঙ শরাব,
মনে ব্যথার বিনুনি মোর খোঁপায় যেমন তোর চুনোট ।

[৫]
প্রভাত হ’ল ! শরাব দিয়ে করব সতেজ হৃদয়-পুর,
যশোখ্যাতির ঠুনকো এ কাচ করব ভেঙে চখ্ নাচুর ।
অনেক দিনের সাধ আশা এক নিমেষে করব ত্যাগ,
পরব প্রিয়ার বেণী বাঁধন, ধরব বেণুর বিধুর সুর !

[৬]
ওঠো, নাচো ! আমরা প্রচুর করব তারিফ মদ-অলস
ঔ নার্গিস্ আঁখির তোমার, ঢালবে তুমি আঙুর-রস !
এমন কী আর-জদিই তাহা পান করি দশ বিশ গেলাস,
ছয় দশে ষাট পাত্র পড়লে খানিকটা হয় দিল সরস !

[৭]
তোমার রাঙা ঠোঁটে আছে অমৃত-কুপ প্রান-সুধার,
পেয়ালার ঠোঁট যেন গো ছোঁয় না, প্রিয়া ঠোঁট তোমার
ঐ পেয়ালার রক্ত যদি পান না করি শাপ দিও,
তোমার অধর স্পর্শ করে বড় স্পর্ধা তার !

[৮]
আজকে তোমার গোলাপ-বাগে ফুটল যখন রঙীন গুল্
রেখনা পান-পাত্র বেকার, উপচে পড়ুক সুখ ফজুল ।
পান করে নে, সময় ভীষণ অবিশ্বাসী, শত্রু ঘোর,
হয়ত এমন ফুল-মাখানো দিন পাবি না আজের তুল ।

[৯]
শরাব আনো ! বক্ষে আমার খুশির তুফান দেয় দোলা ।
স্বপ্ন-চপল ভাগ্যলক্ষী জাগল জাগ ঘুম-বিভোল !
মোদের শুভদিন চলে যায় পারদ-সম ব্যস্ত পা’য়,
যৌবনের এই বহ্নি নিভে খোজে নদীর শীতল কোল ।

[১০]
আমরা পথিক ধূলির পথের, ভ্রমি শুধু একটি দিন,
লাভের আঙ্ক হিসাব করে পাই শুধু দুখ, মুখ মলিন !
খুঁজতে গিয়ে এই জীবনের রহস্যেরই কূল বৃথাই
অপূর্ণ সাদ আশা লয়ে হবই মৃত্যুর অঙ্কলীন ॥

[১১]
ধরায় প্রথম এলাম নিয়ে বিস্ময় আর কৌতুহল,
তার পর- এ জীবন দেখি কল্পনা, আঁধার অতল ।
ইচ্ছাথাক কি না থাক, শেষে যেতেই হবে, তাই বলি –
এই যে জীবন আসা-যাওয়া আঁধার ধাঁধার জট কেবল !

[১২]
রহস্য শোন সেই সে লোকের আত্মা যেথায় বিরাজে,
ওরে মানব ! নিখিল সৃষ্টি লুকিয়ে আছে তোর মাঝে ।
তুই মানুষ, তুই-ই পশু, দেবতা দানব স্বর্গদূত,
যখন হতে চাইবি রে যা হতে পারিস তুই তা যে ।

[১৩]
স্রষ্টা যদি মত নিত মোর-আসতাম না প্রানান্তেও,
এই ধরাতে এসে আবার যাবার ইচ্চা নেই মোটেও।
সংখেপে কই, চিরতরে নাশ করতাম সমূলে
যাওয়া-আসা জন্ম আমার;সেও শূন্য শূন্য এও !

[১৪]
আত্মা আমার ! খুলতে যদি পারিতাম এই অস্থিমাস,
মুক্ত পাখায় দেবতা-সম পালিয়ে যেতিস্ দুর আকাশ।
লজ্জা কি তোর হ’ল না রে , ছেড়ে তোর ঐ জ্যোতির্লোক
ভিন্-দেশী প্রায় বাস করতে এলি ধরার এই আবাস?

[১৫]
সকল গোপন তত্ত্ব জেনেও পার্থিব এই আবহাওয়ার
মিথ্যা ভয়ের ভয় গেল না ? নিত্য ভয়ের হও শিকার ?
জানি স্বাদীন ইচ্ছামত যায় না চলা এই ধরায়,
যতটুকু সময় তবু পাও হাতে, লও সুযোগ তার ।

[১৬]
ব্যথায় শান্তি লাভের তরে থাকত যদি কোথাও স্থান
শ্রান্ত পথের পথিক মোরা সেথায় জুড়াতাম এ প্রাণ।
শীত-জর্জর হাজার বছর পরে নবিন বসন্তে
ফুলের মত উঠত ফুটে মোদের জীবন মুকুল ম্লান।

[১৭]
বুলবুলি এক হালকা পাখায় উড়ে যেতে গুলিস্থান,
দেখল হাসিখুশী ভরা গোলাপ লিলির ফুল-ভাথান।
আনন্দ সে উঠল গাহি, “মিটিয়ে নে সাধ এই বেলা,
ভোগ করতে এমন দিন আর পাবিনে তুই ফিরিয়ে প্রান !”

[১৮]                                                                                 রূপ-মাধুরীর মায়ায় তোমার য’দিন পার, লো প্রিয়া ,
তোমার প্রেমিক বধুর ব্যথা হরন করো প্রেম দিয়া !          রূপ-লাবনীর সম্ভার  এই রইবে না সে চিরকাল, 
ফিরবে না আর তোমার কাছে  যায় যদি বিদায় নিয়া ।

[১৯]
সাকী ! আনো আমার হাতে মদ পেয়ালা ধরতে দাও !
প্রিয়ার মত ও মদ-মদির সুরত ওয়ালী ধরতে দাও !
জ্ঞানী এবং অজ্ঞানীরে বেঁধে যা’ দেয় গাঁট ছড়ায়,
সেই শরাবের শিকল, সাকী আমায় খালি পরতে দাও ।

[২০]
নীল আকাশের নয়ন ছেপে বাদল-অশ্রুজল ঝরে,
না পেলে আজ এই পানীয় ফুটতনা ফুল বন ভরে ।
চোখ জুড়াল আমার যেমন আজ এ ফোটা ফুলগুলি,
মোর কবরে ফুটবে যে ফুল- কে জানে হায় কার তরে !

[২১]
করব এতোই শীরাজী পান পাত্র এবং পরান ভোর
তীব্র-মিঠে খোশবো তাহার-উঠবে আমার ছাপিয়ে গোর ।
থমকে যাবে চলতে পথিক আমার গোরের পাশ দিয়ে,
ঝিমিয়ে শেষে পড়বে নেশায় মাতাল-করা গন্ধে ওর ।

[২২]
দেখতে পবে যেথায় তুমি গোলাপ লালা ফুলের ভিড়,
জেনো, সেতায় ঝরেছিল কোনো শাহানশা’র রুধির ।
নার্গিস আরগুল-বনোসা’র দেখবে যেথায় সুনীল দল,
ঘুমিয়ে আছে সেথায় গালে তিল ছিল যে সুন্দরীর ।

[২৩]
নিদ্রা যেতে হবে গোরে অনন্তকাল, মদ পিও !
থাকবে নাকো সাথী সেথায় বন্ধু প্রিয় আত্মীয় ।
আবার বলতে আসবে না ভাই বলছি যা তা রাখ্ শুনে—
ঝরছে যে ফুলের মুকুল, ফুটতে পারে আর কি ও ?

[২৪]
বিদায় নিয়ে আগে যারা গেছে চলে, হে সাকী,
চির ঘুমে ঘুমায় তারা মটির তলে, হে সাকী !
শরাব আনো, আসল সত্য আমার কাছে যাও শুনে,
তাদের যত তথ্য গেল হাওয়ায় গলে, হে সাকী !

[২৫]
তুমি আমি জন্মিনিকো—যখন শুধু বিরাম-হীন
নিশীথিনীর গলা ধরে ফিরতো হেথায় উজল দিন;-
বন্ধু, ধীরে চরণ ফেলো ! কাজল-আঁখি সুন্দরীর
আঁখির তারা আছে হেথায় হেথায় হয়ত ধূলির অঙ্কলীন !

[২৬]
প্রথম থেকেই আছে লেখা অদৃষ্টে তোর যা হবার,
তাঁর সে কলম দিয়ে- যিনি দুখে সুখে  নির্বিকার ।
স্রেফ বোকামি, কন্নাকাটি লড়তে যওয়া তার সাথে,
বিধর লখন ললাট-লিপি টলবে না যা জন্মে আর !

[২৭]
ভালো করেই জানি আমি, আছে এক রহস্য-লোক,
যায় না বলা সকলকে তা ভালোই হোক কি মন্দ হোক ।
আমার কথা ধোঁয়ায় ভরা, ভাঙতে তবু পারবো না—
থাকি সে কোন গোপন-লোকে দেখতে যাহা পায় না চোখ ।
[৩২]

খাজা ! তোমার দরবারে মোর একটি শুধু আর্জি এই-
থামাও উপদেশের ঘটা, মুক্তি আমার এই পথেই।
দৃষ্টি-দোষে দেখছ বাঁকা আমার সোজা সরল পথ,
আমায় ছেড়ে ভালো করো ঝাপসা তোমার চক্ষুকেই।

[২৮]
চলবে নাকো মেকি টাকার কারবার আর, মোল্লাজি !
মোদের আবাস সাফ করে নেয় শেয়ান-ঝাড়ুর কারসাজি
বেরিয়ে ভাঁটি-খানার থেকে বলল হেঁকে বৃদ্ধ পীর—
“অনন্ত ঘুম ঘুমাবি কাল পান করে নে মদ আজি !”

[৩৩]
কাল কি হবে কেউ জানে না দেখছ ত হায় বন্ধু মোর !
নগদ মধু লুঠ করে লও, মোছ মোছ অশ্রু লোর।
চাঁদনি-তরল শরাব পিও, হায়, সুন্দর এই সে চাঁদ
দীপ জ্বালিয়ে খুঁজবে বৃথাই কাল এ শূন্য ধরার ক্রোড়!

[৩৪]
প্রেমিকরা সব আমার মতো মাতুক প্রেমের মত্ততায়,
দ্রাক্ষা-রসের দীক্ষা নিয়ে আচার-নীতি দলুক পায়।
থাকি যখন শাদা চোখে, সব কথাতে রুষ্ট হই,
শরাব পিয়ে দল-দরিয়া উড়িয়ে দি ভয়-ভাবনায়।

[৩৫]
মানব-দেহ—রঙে-রূপে এই অপরূপ ঘরখানি—
স্বর্গের সে শিল্পী কেন করল সৃজন কী জানি,
এই ‘লালা-রুখ’,বল্লী-তনু ফুল্ল-কপোল তন্বীদের
সাজাতে হায় ভঙ্গুর এই মাটির ধরার ফুলদানি !

[৩৭]
দোষ দেয় আর ভৎসে সবাই আমার পাপের নাম নিয়া,
আমার দেবী-প্রতিমারে পূজি তবু প্রাণ দিয়া।
মরতে যদি হয় গো আমার শরাব-পানের মজলিশে—
স্বর্গ-নরক সমান, পাশে থাকবে শরাব আর প্রিয়া।

[৩৮]
মুসাফিরের এক রাত্রির পান্থ-বাস এ পৃথ্বীতল—
রাত্রি-দিবার চিত্র-লেখা চন্দাতপ আঁধার-উজল।
বসল হাজার জামশেদ ঐ উৎসবেরই আঙ্গিনায়
লাখ বাহ্ রাম এই আসনে বসে হ’ল বেদখল।

[৩৯]
কারুর প্রাণে দুখ দিও না, করো বরং হাজার পাপ,
পরের মনের শান্তি নশি বাড়িও না তার মনস্তাপ।
অমর-আশিস্ লাভের আশা রয় যদি, হে বন্ধু মোর,
আপনি সয়ে ব্যথা, মুছো পরের বুকের ব্যথার ছাপ।

[৪০]
ছেড়ে দে তুই নিরস বাজে দর্শন শাস্ত্রপাঠ,
তার চেয়ে তুই দর্শন কর প্রিয়ার বিনোদ বেণীর ঠাট্
ঐ সোরাহির হৃদয়-রুধির নষ্কাশিয়া পাত্রে ঢাল,
কে জানে তোর রুধর পিয়ে কখন মৃত্তু হয় লোপাট।

[৪১]
অজ্ঞানেরই তিমির-তলের মানুষ ওরে বে-খবর !
শূন্য তোরা, বুনিয়াদ তোর গাঁথা শূন্য হওয়ার পর।
ঘুরিস অতল অগাধ খাদে, শূন্য মায়ার  শূন্যতায়,
পশ্চাতে তোর অতল শূন্য অগ্রে শূন্য অসীম চর।

[৪২]
লয়ে শরাব-পাত্র হাতে পিই যবে তা মত্ত হয়ে
জ্ঞান-হারা হই সেই পুলকের তীব্র-ঘোর বেদন সয়ে,
কি যেন এক মন্ত্র-বলে যায় ঘটে কি অলৌকিক,
প্রোজ্জ্বল মোর জ্ঞান গলে,যায় ঝর্ণা-সম গান বয়ে।

[৪৩]
“শরাব ভীষণ খরাপ জিনিস মদ্যপায়ীর নেইকো ত্রাণ। ”
ডানে বাঁয়ে দোষদর্শীয় সমালোচক ভয় দেখান—
সত্য কথাই ! যে আঙুরে নষ্ট করে ধর্মমত,
সবার উচিত—নিঙড়ে ওরে করে উহার রক্ত পান !

[৪৪]
আমার কাছে শোন উপদেশ—কাউকে কভু বলিসনে—
মিথ্যা ধরায় কাউকে প্রাণের বন্ধু মেনে চিলসনে !
দু:খ ব্যথায় টলিসনে তুই, খুঁজিসনে তার প্রতিষেধ,
চাসনে ব্যথার সমব্যথী, শির উঁচু রাখ ঢলিসনে !

[৪৫]
মউজ চলুক ! লেখার যা তা লিখল ভাগ্য কালকে তোর,
ভুলও কেহ পুঁছল না কি থাকতে পরে তোর ওজর !
ভদ্রতারও অনুমতি কেউ নিল না অমনি ব্যস্
ঠিকঠাক সব হয়ে গেল ভুগবি কেমন জীবন-ভোর !

[৪৬]
সেই সাথে চাই—সৃষ্টি খাতায় দিক কেটে সে আমার নাম,
আমি চাহি স্রষ্টা আবার সৃজন করুন শ্রেষ্টতর
আকাশ ভুবন এই এখনই, এই সে আমার আঁখির’পর ।
কিংবা আমার যা প্রয়োজন তা মিটাবার দিক সে বর ।

[৪৭]
নাস্তিক আর কাফের বলো তোমারা লয়ে আমার নাম
কুৎসা গ্লানির পঙ্কিল স্রোত বহাও হেথা অবিশ্রাম ।
অস্বীকার তার করব না যা ভুল করে যাই, কিন্তু ভাই,
কুৎসিৎ এই গালি দিয়েই তোমরা যাবে স্বর্গধাম ?

[৪৯]
মসজিদ মন্দির গির্জায় ইহুদ-খানায় মাদ্রাসায়
রাত্রি-দিবস নরক-ভীতি স্বর্গ-সুখের লোভ দেখায় ।
ভেদ জানে আর খোঁজ রাখে ভাই খোদার যারা রহস্যের
ভোলে না এই খোশ-গল্পের ঘুম-পাড়ানো কল্পনায় ।

[৫০]
এক হাতে মোর তসবী খোদার, আর-হাতে মোর লাল গেলাস
অর্ধেক মোর পুণ্য-স্নাত, আধেক পাপে করল গ্রাস ।
পুরোপুরি কাফের নহি, নহি খাঁট মুসলিমও—
করুন চোথে হেরে আমায় তাই ফিরোজা নীল আকাশ ।

[৫১]
একমণী ঐ মদের জালা গিলব, যদি পাই তাকে,
যে জালাতে প্রাণের জ্বালা নেভাবার ওষুধ থাকে !
পুরানো ঐ যুক্তি তর্কে দিয়ে আমি তিন তালাক,
নতুন করে করব নকাহ্ আঙুর-লতার কন্যাকে ।

[৫২]
বিষাদের ঐ সওদা নিয়ে বেড়িয়ো না ভাই শিরোপরি,
আঙুর-কন্যা সুরার প্রেম ক’রে যাও প্রেম ক’রে যাও প্রাণ ভরি !
নিষিদ্ধা ঐ কন্যা, তবু হোক সে যতই অ-সতী,
তাহার সতী মায়ের চেয়ে ঢের বেশী সে সুন্দরী !

[৫৩]
স্বর্গে পাব শরাব-সুধা এ যে কড়ার খোদ খোদার,
ধরায় তাহা পান করলে পাপ হয়, এ কোন বিচার?
‘হামজা’ সাথে বেয়াদবি করল মাতাল এক আরব,-
তুচ্ছ কারণ—শরাব হারাম তাই হুকুমে ‘মোস্তফার’!

[৫৪]
“রজব শাবান পবিত্র মাস” বলে গোঁড়া মসলমান,
“সাবধান, এই দু’মাস ভাই কেউ ক’রো না শরাব পান ।”
খোদা এবং তার রসুলের ‘রজব’ ‘শাবান’ এই দু’মাস
পান-পিয়াসীর তরে তবে সৃষ্ট বুঝি এ রমজান ?

[৫৫]
শুক্রবার আজ, বলে সবাই পবিত্র নাম জুম্মা যার,
হাত যেন ভাই খালি না যায়, শরাব চলুক আজ দেদার ।
এক পেয়লি শরাব যদি পান করো ভাই অন্যদিন,
দু’পেয়ালি পান করো আজ বারের বাদশ জম্মা বার ।

[৫৭]
মুগ্ধ করো নিখিল হৃদয় প্রেম-নিবেদন কৌশলে
হৃদয়-জয়ী হে বীর, উড়া্ও নিশান প্রিয়ার অঞ্চলে ।
এক হৃদয়ের সমান নহে, লক্ষ মসজিদ আর কাবা
কি হবে তোর তীর্থে ‘কাবা’র শান্তি খোঁজ হৃদয় তলে ।

[৬০]
মদ পিও আর ফুর্তি করো—আমার সত্য আইন এই !
পাপ পূন্নের খোজ রাখি না—স্বতন্ত্র মোর ধর্ম সেই ।
ভাগ্য সাথে বিয়ের দিনে কইনু, “দিব কি যৌতুক?”
কইল বধূ, “খুশি থাকো, তার বড় যৌতুক সে নেই !”

[৬১]
কে সোরাহি সুরা দিও, একটু রুটির ছিলকে আর
প্রিয়া সাকী, তাহার সাথে একখানি বই কবিতার,
জীর্ণ আমার জীবন জুড়ে রইবে প্রিয়া আমার সাথ,
এই যদি পাই চাইব নাকো তখৎ আমি শাহানশার !

[৬২]
হুরী বলে থাকলে কিছু—একটি হুরী, মদ খানকি
ঘাস-বিছানো ঝর্ণাতীরে, অল্প বয়েস, বৈতালিক—
এই যদি পাস, স্বর্গ নামক পুরনো সেই নরকটায়,
চাসনে যেতে, স্বর্গ ইহাই, স্বর্গ যদি থাকেই ঠিক ।

[৬৩]
যতক্ষণ এ হাতের কাছে আছে অঢেল লাল শরাব
গেঁহুর রুটি, গরম কোর্মা কালিয়া আর শিক-কাবাব,
আর লালা-রুখ প্রিয়া আমার কটীর-শয়ন-সঙ্গিনী,-
কোথায় লাগে শাহান-শাহের দৌলৎ ঐ বে-হিসাব !

[৬৪]
দোষ দিও না মদ্যপায়ীর তোমরা, যারা খাওনা মদ,
ভালো করার থাকলে কিছু, মদ খাওয়া মোর হ’ত রদ্ ।
মদ না পিয়েও, হে নীতিবিদ্, তোমরা যে-সব কর পাপ,
তাহার কাছে আমরা শিশু, হইনা যতই মাতাল-বদ !

[৬৫]
খুশী-মাখা পেয়ালাতে ঐ গোলাপ-রক্ত মদ-মধুর !
মধুরতর পাখীর গীতি, বেণুর ধ্বনি বীণার সুর ।
কিন্তু ঐ যে ধর্মগোঁড়া-বুঝল না যে মদের স্বাদ,
মধুরতম—রয় সে যখন অন্ততঃ পাঁচ যোজন দূর ।

[৬৬]
চৈতী-রাত্রে খুঁজে নিলাম তৃণাস্তৃত ঝর্ণা তীর,
সুন্দরী এক হুরী নিলাম, পেয়ালা নিলাম লাল পানির ।
আ,ার সা, েকইল গাহার তুৎসা গ্লানির ঝড় তুফান,
ভুলেও মনে হ’ল না মোর স্বর্গ নরকের নজীর ।

[৬৭]
সাকী-হীন ও শরাব-হীনের জীবনে হায় সুখ কী বল ?
নাই ইরাকী-বেণুর ধ্বনির জমজমাটি সুর-উছল
সুখ নাই ভাই সেথায় থেকে, এই জগতের তত্ত্ব শোন,
আনন্দ-হীন জীবন-বাগে ফলে শুধু তিক্ত ফল ।

[৬৮]
মরুর বুকে বসাও মেলা, উপনিবেশ আনন্দের,
একটি হৃদয় খুশী করা তাহার চেয়ে মহৎ ঢের ।
প্রেমের শিকল পরিয়ে যদি বাঁধতে পার একটি প্রাণ—
হাজার বন্দী মুক্ত করার চেয়েও অধিক পুণ্য এর ।

[৬৯]
শরাব এবং প্রিয়ায় নিয়ে, সাকী, হেথায় এলাম ফের ।
তৌবা করেও পাইনে রেহাই হাত হতে ভাই এই পাপের ।
”নূহ’ আর তাঁর প্লাবন-কথা শুনিয়ো নাকো আর, সাকী,
তার চেয়ে মদ-প্লাবন এনে ডুবাও ব্যথা মোর বুকের !

[৭৩]
মধুর, গোলাপ-বালার গালে দক্ষিন হাওয়র মদির শ্বাস,
মধুর, তোমার রুপের কুহক মাতায় যা এই পুস্পাবাস ।
যে গেছে কাল গেছে চলে এলো না তার ‘ম্লান স্মৃতি’
মধুর আজের কথা বল, ভোগ করে নাও এই বিলাস ।

[৭৪]
শীত ঋতু ঐ হল গত বইছে বায় বসন্তের,
জীবন পুথির পাতাগুলি পড়বে ঝ’রে, নাই দেরি ।
ঠিক বলেছেন দরবেশ এক’ “দুষিত বিষ এই জীবন,
দ্রক্ষার রস বিনা ইহার প্রতিষেধক নাই, হেরি ।”

[৭৫]
সরো‘র মতন সরল-তনু টাটকা-তোলা গোলাপ-তুল,
কুমারীদের সঙ্গে নিয়ে আনন্দে তুই হ’মশগুল !
মৃত্যুর ঝড় উঠবে কখন আয়ুর পিরাণ ছিড়বে তোর—
পড়ে আছে ধুলায় যেমন ঐ বিদীর্ণ্ দল মুকুল !

[৭৭]
আমার সাথী সাকী জানে মানুষ আমি কোন জাতের,
চাবি আছে তার আঁচলে আমার বুকের সুখ দুখের ।
যেমনি মেজাজ মিইয়ে আসে গেলাস ভরে দেয় সে মদ,
এক লহমায় বদলে গিয়ে দূত হয়ে যাই দেব লোকের ।

(১২১)
নিত্য দিনে শপথ করি—করব তৌবা আজ রাতে,
যাব না আর পানশালাদে, ছোঁব না আর মদ হাতে ।
অমনি আঁখির আগে দাঁড়ায় গোলাপ ব্যাকুল বসন্ত
সকল শপথ ভুল হয়ে যায়, কুলোয় না আর তৌবাতে ।

Saturday, January 28, 2017

হুররেম সুলতান


(প্রায় ১৫০২ – ১৫ এপ্রিল ১৫৫৮)

হুররেম সুলতান 
রোক্সেলানা হিসেবেও পরিচিত।"রোক্সেলানা" সম্ভবত তার মূল নাম নয় বরং তার ডাকনাম ছিল, যা তার রুসাইন বংশসূত্রকে নির্দেশ করত।১৬শ-শতাব্দীর পরবর্তী এবং ১৭শ- শতাব্দীর শুরুর দিকে তুর্কি বিষয়ে গবেষক পোলিশ কবি সামুয়েল ত্বারদভস্কির দেয়া তথ্য অনুসারে, হুররেম সম্ভবত কোন ইউক্রেনীয় অর্থোডক্স ধর্মযাজক পিতার ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন। তিনি পোল্যান্ড রাজ্যের রুথেনীয় ভয়ভডেশিপের প্রধান শহর ল্বও-এর ৬৮ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বের রুহাটাইন নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন (বর্তমান পশ্চিম ইউক্রেন)।১৫২০-এর দশকে ক্রিমিয়ার তাতাররা ওই এলাকার একটি তড়িৎ অভিযানের সময় তাকে বন্দী করে একজন দাসী হিসেবে নিয়ে আসে (সম্ভবত প্রথমে ক্রিমিয়ার নগরী কাফফায়, যা দাস ব্যবসার একটি প্রধান কেন্দ্র, এরপর কনস্টান্টিনোপলে) এবং তাকে প্রথম সুলাইমানের হারেমের জন্য বাছাই করে।
অল্প সময়ের মধ্যেই রোক্সেলেনা তার মনিব সুলায়মানের সুনজরে চলে আসেন এবং সমসাময়িক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ঈর্ষার পাত্রীতে পরিণত হন। শীঘ্রই তিনি সুলায়মানের প্রিয়তম সঙ্গিনী বা হাসেকি সুলতান হয়ে ওঠেন। সুলতানের উপর হুররামের প্রভাবের কথা দ্রুত আশেপাশের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। তিনিই সুলতানের সর্বাধিক সংখ্যক সন্তানের জন্ম দেন। 


উসমানীয় সম্রাট প্রথম সুলাইমানের প্রিয়তম প্রমোদ দাসী ও পরবর্তীকালে তার বৈধ স্ত্রী এবং সম্রাটের সন্তান শাহজাদা মুহাম্মদ, মিরহিমাহ সুলতান, শাহজাদা আবদুল্লাহ, সুলতান দ্বিতীয় সেলিম, শাহজাদা বায়েজিদ এবং শাহজাদা জাহাঙ্গীরের মাতা ।
দুইশত বছরের অটোম্যান ঐতিহ্যকে ভঙ্গ করে, একজন প্রাক্তন উপপত্নী এভাবে অবশেষে সুলতানের বৈধ পত্নী হয়ে ওঠে, যা প্রাসাদ ও নগরীর প্রত্যক্ষদর্শীদের জন্য অত্যন্ত হতবাককারী একটি বিষয় ছিল।
তিনি ছিলেন উসমানীয় ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর নারীদের মধ্যে একজন এবং নারীদের সালতানাত নামে পরিচিত । তার স্বামী প্রথম সুলায়মানের শাসনকালে তিনি সুলতানের প্রধান স্ত্রী বা "হাসেকি সুলতান" ছিলেন। তিনি তার স্বামীর মাধ্যমে ক্ষমতা অর্জন করে ।

প্রাসাদে প্রভাব বিস্তার 

ইস্তাম্বুলের হেরেমে হুররেম সুলতান সুলায়মানের প্রথম স্ত্রী, মাহিদেভরান সুলতানের একজন শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন। ১৫২১ সালে হুররেম তার প্রথম পুত্র মেহমেদের জন্ম দেন এবং এরপর আরও চার পুত্র, যা সুলতানের একমাত্র পুত্রের মাতা হিসেবে অর্জিত মাহিদেভরানের মর্যাদাকে ধূলিসাৎ করে দেয়। সুলায়মানের মাতা, আয়শে হাফসা সুলতান, এই দুই মহিলার শত্রুতাকে একপাক্ষিকভাবে গোপন রাখতেন কিন্তু ১৫৩৪ সালে তার মৃত্যুর পর, একটি তুমুল লড়াই সঙ্ঘটিত হয়, যেখানে মাহিদেভরান হুররেমকে মারধর করেন। এ ঘটনায় সুলাইমান ক্ষুব্ধ হয়ে পরবর্তীতে মাহিদেভ্রানকে পুত্র মুস্তফা সহ প্রাদেশিক রাজধানী মানিসায় পাঠিয়ে দেন। এই নির্বাসনকে দাপ্তরিকভাবে সবার কাছে দেখানো হল যে, এটি হল সাঞ্জাক বেয়লিজি বা আপাত উত্তরাধিকারীর প্রথাগত প্রশিক্ষণ।

হুররেম এবং মাহিদেভরান মিলে সুলাইমানের ছয় পুত্রসন্তানের জন্ম দেন, যাদের মধ্যে ৪ জন ১৫৫০ সালের মধ্যে জীবিত ছিল: মুস্তফা, সেলিম, বায়েজিদ, ও জাহাঙ্গীর। এদের মাঝে, মুস্তাফা ছিল বয়োজ্যেষ্ঠ উত্তরাধিকারী হিসেবে হুররেমের সন্তানের অগ্রবর্তী ছিলেন। হুররেম জানতেন যে নিয়মানুসারে মুস্তাফাই সুলতান হবে, এবং তার নিজ সন্তানদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হবে। তথাপি মুস্তফাও সকল ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে বিচক্ষণ বলে অনেকেই তাকে প্রাধান্য দিত এবং পারগালি ইব্রাহীম পাশাও তাকে সমর্থন করতেন, যিনি ১৫২৩ সালে সুলতানের প্রধান উজির হন। অনেক তথ্যসূত্রে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, ইব্রাহিম পাশা হুররেম সুলতানের চক্রান্ত ও প্রাসাদে তার উঠতি প্রভাবের একজন ভুক্তভোগী ছিলেন, বিশেষ করে অতীতে শাহজাদা মুস্তফাকে সমর্থন করার কারণে। হুররেমকে অন্তত আংশিকভাবে হলেও উত্তরসূরি বাছাই করার চক্রান্তের জন্য দায়ী বলে ধরা হয়। তবে সুলায়মানের স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তিনি দাপ্তরিক ও সরকারি কোন কাজে ভূমিকা রাখতেন না। এই বিষয়টি তার শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে প্রতিবন্ধক ছিল। প্রথম আহমেদের শাসনামলের আগপর্যন্ত সাম্রাজ্যে সুলতানের মৃত্যু হলে, উত্তরসূরি নির্বচনের কর্মকাণ্ডে বেসামরিক অস্থিরতা ও বিদ্রোহ প্রতিহত করতে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজপুত্রদের গোপনে বা প্রকাশ্যে হত্যা করা হতো। নিজ পুত্রদের প্রাণদণ্ডকে এড়াতে, হুররেম মুস্তাফার অভিশংসনের সমর্থকদের নির্মূল করতে নিজ প্রভাবকে কাজে লাগাতে শুরু করলো।

এভাবে হুররেমের প্ররোচনায় পরিচালিত ক্ষমতার লড়াইয়ে,সুলাইমান ১৫৩৬ সালে ইব্রাহিমকে খুন করেন এবং এবং তার কন্যা মিহিরমার স্বামী ও তার স্নেহভাজন জামাতা রুস্তম পাশাকে (প্রধান উজির ১৫৪৪-১৫৫৩ এবং ১৫৫৫-১৫৬১) তার স্থলাভিষিক্ত করেন। বহু বছর পর, সুলায়মানের দীর্ঘ শাসনামলের শেষের দিকে, তার পুত্রদের শত্রুতা আরও স্পষ্ট ও প্রকট আকার ধারণ করে। অধিকন্তু, রুস্তম পাশা ও হুররেম সুলতান উভয়ই সুলায়মানকে মুস্তফার বিরুদ্ধে উসকিয়ে দেন এবং মুস্তফাকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। ১৫৫৩ সালে সফভীয় ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানকালে, সুলতান সুলায়মান মুস্তাফার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।একটি তথ্যসূত্র অনুসারে, সে বছর তিনি তার বাবাকে সিংহাসনচ্যুত করার পরিকল্পনার অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়, তার অভিযুক্ত হওয়ার কারণটি প্রমাণিত ও অপ্রমাণিত হওয়ার মাঝখানে আঁটকে থাকে।মুস্তফার মৃত্যুর পর, মাহিদেভরান প্রাসাদে তার অবস্থান হারান (আসন্ন উত্তরাধিকারীর মা হিসেবে) এবং বুরসায় গিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকেন। শেষের দিকে তার সৎপুত্র দ্বিতীয় সেলিম সুলতান হওয়ার পর (১৫৬৬) তাকে নিয়মিত ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করায় তাকে আর দারিদ্রে ভুগতে হয় নি। ১৫৫৮ সালে হুররেমের মৃত্যুর পরেই কেবলমাত্র তার পুনর্বাসন সম্ভবপর হয়।কথিত আছে যে, জাহাঙ্গীর, হুররেমের কনিষ্ঠ সন্তান, তার সৎ-ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে বেদনাকাতর হয়ে কয়েক মাস পরেই মারা যান।

১৫৫৩ সালে সুলায়মান মুস্তাফাকে প্রাণদণ্ড দেয়ার পর, সৈন্যদের মধ্যে একটি বড়মাপের অসন্তুষ্টি ও অস্থিরতার উত্থান হয় যারা রুস্তম পাশাকে মুস্তফার মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন। এ ঘটনায় সুলায়মান রুস্তম পাশাকে বরখাস্ত করেন এবং ১৫৫৩ সালে কারা আহমেদ পাশাকে প্রধান উজির হিসেবে নিয়োগ দেন। কিন্তু সবে দুই বছর পর, কারা আহমেদ পাশাও হুররেম সুলতানের নোংরা চক্রান্তের স্বীকার হন, কারণ হুররেম তার জামাতা রুস্তম পাশাকেই আবারও প্রধান উজির হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। ১৫৫৫ সালে কারা আহমেদ পাশাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় এবং রুস্তম পাশাকে আরও একবার প্রধান উজির (১৫৫৫-১৫৬১) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

সুলায়মান বাকি জীবনে রাজসভাতেও হুররেমকে তার সাথে থাকতে দেন, যার ফলে আরেকটি প্রথা ভঙ্গ হয়, আর তা হল, যখন সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারীগণ উপযুক্ত বয়সে পৌঁছুবে, তাঁদেরকে তাঁদের রাজ উপপত্নীসহ (উত্তরাদিকারিদেরকে তাঁদের মাতাসহ) নিকটস্থ প্রদেশে শাসনের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হবে, উক্ত উপপত্নীদের সন্তান ক্ষমতায় বসার আগ পর্যন্ত তারা ফিরে আসতে পারবে না।সুলতানের রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবেও হুররেম ভূমিকা পালন করেছেন, এবং প্রতীয়মান হয় যে তিনি বৈদেশিক নীতি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও প্রভাব রেখেছিলেন।রাজা সিগিসমন্ডাস দ্বিতীয় অগাস্টাসকে প্রেরিত তার দুটি চিঠি এখনো টিকে আছে, এবং স্বভাবতই তার জীবদ্দশায় পোলিশ- অটোমান মৈত্রীচুক্তির মাধ্যমে পোল্যান্ড রাজ্যের সঙ্গে অটোম্যান সাম্রাজ্যের শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান ছিল। করেছিলেন এবং সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। 

হুররেম সুলতান ১৫ ই এপ্রিল ১৫৫৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন । সুলায়মানের সমাধির পাশেই তার সমাধি অবস্থিত, যা সুলায়মানিয়ে মসজিদের প্রাঙ্গনে অবস্থিত 



সূত্র- 
১। উইকিপিডিয়া
২। অনলাইন পত্রিকা 

Sunday, January 22, 2017

Make your path

A lady worked at a meat distribution factory. One day, when she finished with her work schedule, she went into the meat cold room (Freezer) to inspect something, but in a moment of misfortune, the door closed and she was locked inside with no help in sight. Although she screamed and knocked with all her might, her cries went unheard as no one could hear her. Most of the workers had already gone, and outside the cold room it's impossible to hear what was going on inside. Five hours later, whilst she was at the verge of death, the security guard of the factory eventually opened the door. She was miraculously saved from dying that day. When she later asked the security guard how he had come to open the door, which wasn't his usual work routine, this was his explanation:
"I've been working in this factory for 35 years. Hundreds of workers come in and out every day, but you're one of the few who greet me in the morning and say goodbye to me every evening when leaving after work. Many treat me as if I'm invisible. Today, as you reported for work, like all other days, you greeted me in your simple manner 'Hello'. But this evening after working hours, I curiously observed that I had not heard your "Bye, see you tomorrow". Hence, I decided to check around the factory. I look forward to your 'hi' and 'bye' every day because they remind me that I am someone. By not hearing your farewell today, I knew something had happened. That's why I was searching every where for you."

*Moral Lesson to reflect upon* : Be humble, love and respect those around you. Try to have an impact on people who cross your path every day, you never know what tomorrow will bring.

Friday, January 20, 2017

তাবলীগ জামাতের মধ্যে প্রচলিত পরিভাষা

তাবলীগ জামাতের সাথে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে কিছু পরিভাষা প্রচলিত। এটার বাংলা পরিভাষা অনেকেই জ্ঞাত নয়, একারণে বিষয়টি নিয়ে অনেক জিজ্ঞাসা। পাঠকের কথা বিবেচনা করে এখানে অতি ব্যবহৃত পরিভাষা সমূহ উপস্থাপন করা হচ্ছে। পাঠক মনে রাখা প্রয়োজন ভারতবর্ষে যাদের দ্বারা এটি উদ্বোধিত হয়েছিল তাদের ভাষা ছিল উর্দু। সে কারণে উর্দুর আধিক্য লক্ষ্য করা যায়।পাশাপাশি রয়েছে আরবী শব্দের আধিক্য।

ইজতেমা : সমাবেশ, মহাসমাবেশ

তাবলিগ : পৌঁছানো, প্রচার করা

আমির : দলপতি, নেতা

রাহবার : পথপ্রদর্শক

মামুর : আমিরের অনুসরণকারী

মুতাকাল্লিম : কথক, বক্তা

গাশত : ভ্রমণ, ঘোরাফেরা করা

উমুমি গাশত : দলবদ্ধভাবে দাওয়াতে গমন

খুসুসি গাশত : বিশেষ কাউকে দাওয়াত দেয়ার জন্য ভ্রমণ করা

তাশকিল : গঠন, রূপদান (জামাত গঠন করা)

তালিম : শিক্ষা (শিক্ষার আসর)

আম বয়ান : সবার উদ্দেশে দেয়া বক্তৃতা

খাস বয়ান : বিশেষ কোনো শ্রেণীর জন্য প্রদত্ত বক্তৃতা

তায়ারুফি বয়ান : (যে কোনো স্থানে জামাত যাওয়ার পর দেয়া) পরিচিতিমূলক বয়ান

ছয় নম্বর : তাবলিগে অগ্রাধিকার দেয়া সাহাবিদের বিশেষ ছয় গুণ

একরাম : সম্মান দেখানো, সহযোগিতা বা খেদমত করা।

ইস্তেকবাল : অভ্যর্থনা

খেদমত : সেবা করা (জামাতের সাথীদের খাবার আয়োজনের দায়িত্ব)

মাশওয়ারা : পরামর্শ

সামানা : আসবাবপত্র

খিত্তা : টুকরো জায়গা, এলাকা (ইজতেমা মাঠের এলাকা নির্ধারক নাম)

চিল্লা : ৪০ দিনের জন্য বিভিন্ন মসজিদের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়া

তিন চিল্লা : চার মাস মেয়াদে আল্লাহর রাস্তায় বেরিয়ে পড়া

সাল : এক বছর আল্লাহর রাস্তায় কাটানো।

জোড় : বিভিন্ন স্তরের সাথীদের বিশেষ সম্মেলন।

শবগুজারি : তাবলিগের মারকাজে (আল্লাহর রাস্তায়) রাতযাপন।

নুসরত : সাহায্য করা (বহিরাগত জামাতের কাজে সহযোগিতা করা)। 

উসুল : আদায় করা (তাবলিগি সফরের জন্য কাউকে বের করে আনা)।

মোজাকারা : পরস্পর আলোচনা।

Thursday, January 19, 2017

সুস্থ থাকার ২০ টি সূত্র

একেবারে ফিট থাকতে গেলে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। সুস্থ শরীর তার সঙ্গে শান্তিময় জীবন লাভ করতে কে না চায়। কিন্তু বিশৃঙ্খলার আড়ালে জীবনটাই এলোমেলো হয়ে যায়। থাকে না শান্তি, থাকে না স্ব্বস্তি। সুস্থ থাকার কিছু সূত্র আছে। সেগুলো কী তা জেনে নিই।

—প্রতিদিন খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠে দুই অথবা তিন কি.মি.
হাঁটুন। এরপর গোসল করে প্রার্থনা করুন। এতে মন এবং প্রাণ সতেজ থাকবে।
—সব সময় সোজা হয়ে বসুন।
—যখনই খাবার খাবেন তখন ভালো করে চিবিয়ে খাবার গ্রহণ করুন। এতে পাচন ক্রিয়া ঠিক থাকবে।
—মোটা হওয়ার প্রধান কারণ হলো তৈলাক্ত এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া। তাই এ ধরনের খাবার খুব কম খান।
—সম্ভব হলে সপ্তাহে একদিন উপোস করে শরীরে খাবারের সমতা বজায় রাখুন।
—গাড়ি থাকলেও খুব বেশি গাড়ি চালাবেন না। বেশিরভাগ সময় হেঁটেই কাজ সারুন। এতে পায়ের মাংসপেশীর ব্যায়াম হবে। আপনি দীর্ঘদিন সুস্থ থাকতে পারবেন।
—বেশি পরিমাণে সবুজ শাক-সবজি আর ফলমূল খান।
—ঘরের সব কাজ নিজে করারই চেষ্টা করুন।
—ব্যস্ত থাকাটা শরীর ও মন—দুয়ের পক্ষে ভালো। তাই কাজে যতটা সম্ভব ব্যস্ত থাকুন।
—আপনার রুচি ও ব্যক্তিত্ব অনুয়ায়ী পোশাক পরিধান করুন।
—শরীরের নিয়মিত যত্ন নিন। শরীরের সৌন্দর্য বজায় রাখুন।
—গরমের দিন রাতে শোয়ার আগে গোসল করুন, এতে ঘুম ভালো হবে।
—রাতে শোয়ার আগে ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রোম ছিদ্রের মধ্য দিয়ে শ্বসন প্রক্রিয়া চালায়। সে কারণে শোয়ার আগে ঢিলেঢালা পোশাক পরে ঘুমানো উচিত।
—চুলের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখুন। কারণ চুল হলো সৌন্দর্যের অঙ্গ। সম্ভব হলে সপ্তাহে একদিন হার্বাল শ্যাম্প দিয়ে মাথা ধৌত করুন।
—প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট ধ্যান করুন। এতে মানসিক শান্তি পাবেন। তার ওপর মনের জোরও বাড়বে।
—ক্রোধ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলুন।
—কথার উপরে সংযম রাখুন। আপনার কথায় কেউ যেন মানসিক দুঃখ না পায়। সেটা মাথায় রেখে কথা বলুন।
—রাতে শোয়ার সময় মনে কোনো চিন্তা রাখবেন না। সুস্ব্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য গভীর ঘুম অত্যন্ত জরুরি।
—পেশাগত কোনো সমস্যা থাকলে সে সমস্যাকে না জিইয়ে রেখে তা মেটানোর চেষ্টা করুন।